অনেক ভাই আনস্কিল হয়ে সিঙ্গাপুরে এসে বিপাকে পড়ছেন – একটি বাস্তব চিত্র ও করণীয় পরামর্শ

বর্তমান বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজের খোঁজে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ পাড়ি জমাচ্ছেন। তার মধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম একটি গন্তব্যস্থল। উন্নত জীবনযাপন, ভালো মজুরি ও কাজের পরিবেশের আশায় অনেকেই ভিসা জোগাড় করে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক ভাই ‘আনস্কিল্ড’ অবস্থায় সিঙ্গাপুর গিয়ে নানা রকম বিপাকে পড়ছেন।

আনস্কিল অবস্থায় বিদেশ যাত্রার বাস্তবতা

প্রথমেই বুঝে নেওয়া জরুরি, “আনস্কিল” মানে এমন ব্যক্তি যার কোন নির্দিষ্ট কাজের উপর প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা নেই। তারা সাধারণত নির্মাণ শ্রমিক, হেলপার, ক্লিনার, বা লোড-আনলোড জাতীয় কাজের জন্য যান। সিঙ্গাপুরের মতো একটি উন্নত দেশে এসব পজিশনে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, এবং নিয়ম-কানুনও খুব কঠোর।

👇 বিপদে পড়ার কয়েকটি সাধারণ কারণ:

  1. ভুয়া বা অস্পষ্ট তথ্য:
    অনেক এজেন্ট বা দালাল ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করে। তারা বলেন, “কাজ একেবারে নিশ্চিত”, অথচ বাস্তবে কাজ থাকে না, বা থাকে খুব খারাপ শর্তে।

  2. ভিসা সমস্যায় পড়া:
    কিছু লোক পর্যটক ভিসা বা অস্থায়ী ভিসা নিয়ে যায়, পরে অবৈধভাবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে। এতে করে তারা ফাইন, জেল বা ডিপোর্ট হওয়ার মতো অবস্থায় পড়েন।

  3. বাসস্থান ও খাদ্যের দুরবস্থা:
    অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসীরা অমানবিক পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকেন। কাজ না থাকলে খরচ চালানো কঠিন হয়ে যায়।

  4. চাকরির নিরাপত্তাহীনতা:
    ‘ডেইলি ওয়েজ’ বা দৈনিক ভিত্তিক কাজের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা কঠিন, কারণ কাজ না পেলে ইনকামও নেই।


বিদেশ যাওয়ার আগে করণীয়:

1. স্কিল ডেভেলপ করুন:

সিঙ্গাপুরে দক্ষ শ্রমিকদের কদর অনেক। প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডিং, CNC অপারেটর, হাউস পেইন্টার, AC টেকনিশিয়ান — এসব কাজের চাহিদা বেশি। বাংলাদেশে থাকতেই এসব বিষয়ে একটি ট্রেনিং করে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন।

2. সরকারি অনুমোদিত এজেন্সি থেকে যান:

বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও BMET-এর তালিকাভুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে বিদেশে যাওয়া নিরাপদ।

3. ভিসার ধরন বুঝে নিন:

সঠিক ওয়ার্ক পারমিট বা এস-পাস অথবা ওয়ার্ক হলিডে ভিসা ছাড়া কাজ করা দণ্ডনীয় অপরাধ সিঙ্গাপুরে। সবসময় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

4. ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিন:

শুধুমাত্র বিদেশ যাওয়াই জীবনের চূড়ান্ত সমাধান নয়। টাকাপয়সা, নিরাপত্তা, ভাষা, সংস্কৃতি ও আইনি দিক নিয়ে ভালোভাবে জানাশোনা করা খুব জরুরি।


💬 একজন প্রবাসীর বাস্তব অভিজ্ঞতা:

“আমি ৩ লাখ টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুর এসেছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল কাজ রেডি, হোস্টেল থাকবে। কিন্তু এসে দেখি কাজ নেই, ৫-৬ দিন না খেয়ে ছিলাম। পরে নিজের দেশেই ফিরতে বাধ্য হই। এখন চাই, কেউ যেন এমন ভুল না করে।” — রাজু, ঢাকার এক প্রাক্তন প্রবাসী।


📢 শেষ কথাঃ নিরাপদ অভিবাসনের জন্য সচেতনতা জরুরি

প্রবাস জীবনে সফলতা আনতে হলে প্রথমেই দরকার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও সচেতনতা। যারা আনস্কিল অবস্থায় বিদেশ যাচ্ছেন, তারা ঝুঁকির মুখে থাকেন। কাজেই, বিদেশ যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ, সঠিক তথ্য, আইনি কাগজপত্র এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরি।

প্রত্যেক অভিবাসীর জীবনে যেন নতুন দেশ হয় নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত — ব্যর্থতার নয়, এটি আমাদের প্রত্যাশা।


📌 আপনার মতামত বা অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন:

আপনি যদি প্রবাসী হন বা এ ধরনের অভিজ্ঞতা থাকে, নিচে কমেন্টে জানাতে পারেন। আপনার একটি পরামর্শ অন্য কাউকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।

FUll TIME BLOGGER & MARKETER This is Heal Uddin a full time blogger, content creator and freelance instructor. I am here to assist you to choose right business software deals. WordPress themes or plugin

Share this content:

Leave a Comment